লালমোহনে দাফনের ৯ দিন পর প্রতিবেশির মারধরে বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ
সন্তান নষ্ট না করায় কিশোরীকে হত্যা করে চাচাতো ভাই
![](https://bholarbani.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার সীমান্ত এলাকা দুধপাতিল গ্রামের আলোচিত কিশোরী তামান্না আক্তার প্রিয়া (১৪) হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।
হত্যার সঙ্গে জড়িত প্রধান আসামি চাচাতো ভাই আলমগীর বৃহস্পতিবার বিকালে আদালতে ১৬৪ ধারায় হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
জবাববন্দিতে সে তার প্রেমের ফসল অবৈধ সন্তান নষ্ট না করায় উপর্যুপরি ধর্ষণের পর কীভাবে হত্যা করেছে তার লোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছে।
বুধবার দিবাগত রাতে পার্শ্ববর্তী বাহুবল উপজেলার মিরপুর ইউনিয়নের চন্দ্রচড়ি তার শ্বশুরবাড়ি অভিযান নিহত তামান্নার প্রেমিক আপন চাচাত ভাই মৃত আব্দুল হাসিমের ছেলে আলমগীরকে (২৫) গ্রেফতার করা হয়।
চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হকের নেতৃত্বে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই শেখ আলী আজহারসহ একদল পুলিশ এ অভিযান পরিচালনা করে।
বৃহস্পতিবার বিকালে হবিগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের আদালতে হাজির করেন। আদালতে ঘাতক ১৬৪ ধারায় এ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে।
আদালতে জবানবন্দিতে আলমগীর জানায়, তিনি মানিকগঞ্জ জেলা থেকে রাজমিস্ত্রির কাজ করে। মাঝেমধ্যে বাড়িতে আসত। হঠাৎ একদিন তার মেজ চাচির নাম্বারে ফোন করে আলমগীর, তখন ফোন রিসিভ করে কিশোরী তামান্না। এ সময় তার সাথে বেশ কয়েক মিনিট কথা হয় এবং এরপর থেকে তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে।
মাঝে মধ্যে চাচির নম্বরে ফোন দিয়ে কথা বলতো দুজনে। গোপনে চলতে থাকে তাদের প্রেম। তামান্নার মা সেলিনা বেগম ৩-৪ বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজে সৌদি আরব থাকেন। ঘরে তামান্নার পিতা ও ছোট একটি ভাই ছাড়া কেউ নাই।
পিতা বেশিরভাগ বাইরে থাকেন, আর ছোট ভাই থাকে লেখাপড়ায়। আলমগীর তার স্ত্রী সন্তানদের কাছে না গিয়ে মানিকগঞ্জ থেকে গ্রামের বাড়ি আসতো তামান্নার কাছে। গড়ে ওঠে অবৈধ সম্পর্ক।
এক পর্যায়ে তামান্না ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। এতে আলমগীর দুশ্চিন্তায় পড়ে যায়। একদিকে তার স্ত্রী সন্তান অন্যদিকে তার অন্তঃসত্ত্বার বিষয়। এ নিয়ে বিপাকে পড়ে আলমগীর।
তারপরও আলমগীর তামান্নাকে ধৈর্য্য ধরার কথা বলে এবং তার স্ত্রী-সন্তানদের একটি আলাদা ঘর বানিয়ে তামান্নাকে মানিকগঞ্জ নিয়ে যাবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। বিষয়টি মানতে নারাজ তামান্না। এ নিয়ে তাদের মধ্যে চলে মনোমালিন্য।
অবশেষে অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় চাপে পড়ে সমাজে থেকে রেহাই পেতে গর্ভপাত করাতে চাপ দেয় আলমগীর। তামান্না প্রেমিক আলমগীরকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করে। ঘাতক আলমগীর তাকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে।
এনিয়ে তামান্নাকে হত্যার পরিকল্পনা করে আলমগীর। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন বিয়ের কথা বলে বাড়ির পার্শ্ববর্তী শাল বাগানে নিয়ে যায় তামান্নাকে। সেখানে রাতভর একাধিকবার তাকে ধর্ষণ করে। পরে শ্বাসরোধে হত্যা করে তাকে।
হত্যাকাণ্ড একাই করেছে বলে আদালতে জানায় আলমগীর। তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে সকাল ৭টা পর্যন্ত লাশ পাহারা দেয়, যাহাতে শেয়াল কুকুরে লাশ না খায়। এরপর সে তার শ্বশুরবাড়ি মিরপুরে পালিয়ে যায়। চুনারুঘাট থানার ওসি শেখ নাজমুল হক জানান, মঙ্গলবার বেলা ১১টায় উপজেলার দুধপাতিল মহুরী ছড়ার পাশে বন্দের বাড়ি পশ্চিমে শাল বাগানে একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
এ ঘটনায় তামান্নার পিতা বাদী হয়ে ঘাতক আলমগীরকে আসামি করে চুনারুঘাট থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।