সব শেষ হওয়ার পর আবরারের বাড়ি যাচ্ছেন বুয়েট ভিসি
ঢাকা- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের দাফন গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় সম্পন্ন হয়েছে। তার আগেরদিন, অর্থাৎ, সোমবার রাত ১০টার দিকে ঢাকায় বুয়েট প্রাঙ্গণে আবরারের প্রথম জানাজা হয়েছিল। দুটোর কোনোটিতেই উপস্থিত না থাকলেও আজ বুধবার কুষ্টিয়ায় আবরারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে রওনা হয়েছেন বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম।
বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার ৪১ ঘণ্টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা না করা, আবরার যে হলে হত্যার শিকার হয়েছিলেন, সেখানে না যাওয়া এবং জানাজায় অংশ না নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে আছেন বুয়েটের উপাচার্য। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছেন যে, হত্যাকাণ্ডের পর পরই বুয়েট ভিসির ক্যাম্পাসে যাওয়া উচিত ছিল।
ভিসির একান্ত সহকারী কামরুল ইসলাম জানান, আবরারের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে ভিসি সাইফুল ইসলাম সকাল ৯টার দিকে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। বিকেল তিনটা নাগাদ তার আবরারের বাড়িতে পৌঁছার কথা। সেখানে তিনি আবরারের শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাবেন বলে জানা গেছে।
গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের নিচতলা থেকে আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তাকে বুয়েটের ছাত্রলীগ নেতা কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করে বলে দাবি সহপাঠীদের।
এ ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পর গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টার পরে প্রকাশ্যে আসেন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। এ সময় শিক্ষার্থীরা জানতে চান, দুদিন ধরে তিনি কোথায় ছিলেন? কিন্তু তিনি কোনো জবাব না দিয়ে সরাসরি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চান। মাইক দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘আবরারের মৃত্যু হয়েছে।’
উপাচার্যের এমন মন্তব্য শুনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। পরে তারা আবরারের মৃত্যু নয় তার খুন হয়েছে বলে চিৎকার শুরু করলে উপাচার্য বলেন, ‘ঠিক আছে খুনই হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আমি অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নিয়েছি। প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি। পাঁচ থেকে ছয়জনকে নিয়ে বসেছি। সবতো আমার হাতে নেই, যেগুলো আমার হাতে আছে সেগুলো আমি করছি। নীতিগতভাবে তোমাদের পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছি। সারা দিন মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। তোমরা অধৈর্য হবে না।’
এ সময় শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির বিষয়ে সিন্ধান্ত না দিয়ে উপাচার্যকে ক্যাম্পাস না ছাড়ার দাবি জানান। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির বিষয়ে অনড় ও প্রশাষণের সিন্ধান্ত জানতে চাইলে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমি তো কোনো অন্যায় করিনি।’ এ কথা শোনার পর উপস্থিত শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিতে থাকে।
এদিকে এ ঘটনায় সোমবার রাতে ১৯ জনকে আসামি করে আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ ঢাকার চকবাজার থানায় মামলা করেন। মামলাটির তদন্ত করতে ডিবিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত মোট ১৩ জনকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছেন ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান। এ মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া ১০ ছাত্রলীগ নেতার পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।