লালমোহনে দাফনের ৯ দিন পর প্রতিবেশির মারধরে বৃদ্ধের মৃত্যুর অভিযোগ
খুনিরা মুখ চেপে ধরেছিল, মৃত্যুর আগে কাঁদতেও পারেননি আবরার!
![](https://bholarbani.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড নিয়ে একের পর এক বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ার জেরে তাকে খুন করা হয়। জানা গেছে, নির্যাতনের সময় আবরার বলেছিলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি, আমাকে মেরো না।’ এ কথা বলার পর নির্যাতনের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। নির্যাতনের সময় এই মেধাবী ছাত্র কাঁদতেও পারেননি। কারণ তার মুখ চেপে ধরেছিল খুনিরা।
সন্ধ্যায় শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে নিজের টেবিলে অঙ্ক কষছিলেন আবরার। রাত ৮টার দিকে আবরারকে ওই হলের দোতলার ২০১১ নম্বর টর্চার সেলে ডেকে নিয়ে হুমকি দিতে শুরু করেন বুয়েট ছাত্রলীগের নেতারা।
একপর্যায়ে ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার আবরারের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ফেসবুক ঘেঁটে বাছ-বিচার না করেই হকিস্টিক দিয়ে পেটাতে শুরু করেন।
সেখানে অবস্থান করা সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিনও আরেকটি হকিস্টিক নিয়ে আবরারকে পেটানোতে অংশ নেন। ওই সময় ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন আবরারের হাত ধরে রাখেন।
আর আবরারের পায়ে পেটাতে থাকেন উপসমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল। সদস্য মুনতাসির আল জেমি, মো. মুজাহিদুর রহমান মুজাহিদ, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, একই বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ইশতিয়াক মুন্নাও নির্দয়ভাবে পেটাতে শুরু করেন আবরারকে।
কেউ হকিস্টিক দিয়ে, কেউ লাঠি দিয়ে, কেউবা কিলঘুষি দিয়ে ইচ্ছামতো আবরারকে পেটানোতে অংশ নেন। এভাবে ২২ জন অংশ নেন এই ভয়ঙ্কর নির্যাতনে। আবরার একটু কাঁদতেও পারেননি। কারণ তখন তার মুখ চেপে ধরা হয়েছিল।
ওই অবস্থার মধ্যেই টর্চার সেলে প্রবেশ করেন বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল ও সহসভাপতি মুহতাসিম ফুয়াদ। তারাও অপেক্ষা না করে নিস্তেজপ্রায় আবরারকে পেটাতে শুরু করেন।
এভাবেই একপর্যায়ে মেধাবী ছাত্র আবরার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। তাদের গ্রেফতার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এমন ভয়ঙ্কর তথ্য পেয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গতকাল তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে ডিবি।
জানতে চাইলে ডিবির যুগ্ম কমিশনার মাহবুব আলম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত ও ঘটনাস্থল থেকে জব্দ করা ভিডিও ফুটেজে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আবরার হত্যাকাণ্ডে জড়িত ১৯ জনের তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’
আবরারকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনার সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রলীগের আইনবিষয়ক উপসম্পাদক ও পুরকৌশল বিভাগের ছাত্র অমিত সাহা। কিন্তু তাকে মামলার আসামি করা হয়নি। এজাহারের বাইরেও এ হত্যার ঘটনায় আরও তিনজনের জড়িত থাকার তথ্য পেয়েছেন গোয়েন্দারা।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে বুয়েট শিক্ষার্থী অমিত সাহাকে মামলা থেকে বাদ দেয়া হয়নি। তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রসঙ্গত ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে রোববার রাতে শেরেবাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে ডেকে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে তার লাশ সিঁড়িতে ফেলে রাখা হয়।
এ ঘটনায় আবরারের বাবা ১৯ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের ১১ জনকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে কেন্দ্রীয় কমিটি।