আবরার হত্যায় ‘বড় নেতার’ নির্দেশ ছিল: চাচা
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পূর্বপরিকল্পনামাফিক হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন তার চাচা মিজানুর রহমান। আবরার হত্যায় ক্ষমতাসীন দলের ‘বড় নেতার’ নির্দেশ ছিল বলে দাবি তার।
মঙ্গলবার আবরারের লাশ তার গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার রায়ডাঙ্গা গ্রামে পৌঁছলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মিজানুর। আবরার হত্যাকাণ্ডে ক্ষমতাসীন দলের বড় কোনো নেতার নির্দেশ আছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, ‘এ ঘটনায় কোনো নেতার ইন্ধন রয়েছে। কেননা দু-একজন নয়, সেখানে ১৫ জনেরও বেশি ছেলে হত্যায় অংশ নিয়েছে। পূর্বপরিকল্পনা ছাড়া এতজন কাউকে মারতে পারে না। হাইকমান্ডের নির্দেশেই এই হত্যাকাণ্ড হয়েছে।’
তবে বড় নেতা কে সেটি তিনি স্পষ্ট করেননি।
বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। মৃত্যুর আগে আবরার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসে সম্প্রতি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সাক্ষরিত একটি চুক্তির সমালোচনা করেন। এই স্ট্যাটাস দেখে অনেকে প্রচার চালান যে, আববার শিবির সমর্থক ছিলেন।
আবরারকে শিবির সন্দেহে ছাত্রলীগের কর্মীরা পিটিয়ে হত্যা করেছে বলে সহপাঠীদের বরাতে খবরও প্রকাশ করেছে কয়েকটি সংবাদমাধ্যম। তবে এই অপপ্রচার একেবারেই সঠিক নয় বলে দাবি করেছেন আবরারের পরিবার। আবরারের চাচা মিজানুর রহমান বলেন, ‘সে (আবরার) শিবিরের কর্মী, এমন কথা রটাচ্ছে সবাই। এটা বানোয়াট, আমরা সবাই আওয়ামী লীগের সমর্থক। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল হানিফ সাহেবের বাড়ির পাশে আমাদের বাড়ি। আমরা হানিফ সাহেবের বিভিন্ন মিটিং মিছিলে অংশ নেই।
আবরারের চাচা জানান, তার ভাতিজা তাবলিগ জামাতে যেতেন। বুয়েটে ভর্তির পর দুই-তিনবার তিনি তাবলিগে গিয়েছিলেন।
আবরারের হত্যাকে পূর্বপরিকল্পিত দাবি করেছেন তার বাবা বরকতউল্লাহ। তিনি বলেন, ‘এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। যে ছেলেটা বিকাল ৫টায় ঢাকায় পৌঁছাল, তাকে ৮টার দিকে নির্যাতন করার জন্য ডেকে নিয়ে গেল। ছয় ঘণ্টা ধরে নির্যাতন চালাল- এটা অবশ্যই পরিকল্পিত।’
প্রসঙ্গত রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়ির মাঝ থেকে আবরারের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। জানা যায়, ওই রাতেই ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে ডেকে নিয়ে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা।
পুলিশ জানিয়েছে, আবরারের দেহে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ণ পাওয়া গেছে। তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক জানিয়েছেন, তার লাশে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
আবরার বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) শিক্ষার্থী ছিলেন।
হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ। এ ঘটনায় বুয়েট ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বুয়েট ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে ১১ জনকে।
সূত্র যুগান্তর