সর্বশেষঃ

রোগ মুক্তিতে বাগেরহাটের ‘শ্যামলী’র দুধ খাচ্ছে মানুষ

অবিশ্বাস্য হলেও সত্য। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ দুধ খাচ্ছে শ্যামলীর। ভোর থেকেই শ্যামলীর দুধ নিতে লম্বা লাইন পড়ে। কেউ খালি হাতে, কেউ বোতল নিয়ে। কয়েকদিন ধরে এমন ঘটনা ঘটছে জেলার রামপাল উপজেলার বাশতলী গ্রামে। গ্রামের মহানন্দ মন্ডলের পোশা ১৮ মাস বয়সী বকনা বাছুর বাচ্চা প্রসব ছাড়া যখন দৈনিক চার কেজি দুধ দিচ্ছেন। তখন এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এই দুধ পান করে বিভিন্ন রোগমুক্তির জন্য প্রতিদিন হাজার হাজার লোক ভীড় করছে মহানন্দের বাড়িতে।

শনিবার সকালে দেখা যায়, মহানন্দের বাড়ির সামনে রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ রয়েছে অটোবাইক, রিকশা, মটর সাইকেল, মাহিন্দ্রসহ নানা যানবাহন। বাড়িতে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে দীর্ঘ লাইন। আঙ্গিনায় হাজারও নারী পুরুষ, শিশুসহ নানা বয়সী মানুষ। রয়েছে ১৫ জন স্বেচ্ছাসেবক, হাত মাইকে বলা হচ্ছে শৃঙ্খলার সাথে অপেক্ষা করুণ। কিছুক্ষনের মধ্যেই শ্যামলী দুধ দিবে।

এসময় কথা হয় শ্যামলীর মালিক মহানন্দের সাথে। তিনি গোয়ালঘর থেকে গরুটি বের করে নিয়ে এসে বলেন, বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের কোন্ডলা গ্রামের সরোয়ার হোসেনের কাছ থেকে ৮ মাস বয়সী একটি বকনা বাছুর ক্রয় করি। বর্তমানে যার বয়স ১৮ মাস। গত চারমাস আগে গোয়ালঘরে গিয়ে ওই বকনাটির বান থেকে দুধ পড়ছে। দুই তিনদিন একই ঘটনা দেখার পরে, আমরা দুধ সংগ্রহ শুরু করি। বিষয়টি অবহিত করি প্রাণী সম্পদ বিভাগকে। তারা এই দুধ খেলে কোন সমস্যা হবে না। এরপর থেকেই আশপাশের মানুষ দুধ খাওয়া শুরু করে। অনেকেই বলতে থাকে এই দুধ খেয়ে তাদের বিভিন্ন রোগ সেরেছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন এলাকা থেকে দুধ নিতে অনেক মানুষ আসে। কিন্তু পর্যাপ্ত চাহিদা মিটাতে পারছি না।

মহানন্দ আরও বলেন, দুধের বিনিময়ে আমরা কারও কাছ থেকে কোন পয়সা নেই না। কিন্তু কেউ যদি কোন টাকা দেয়। আমরা সেটা গ্রহন করি শ্যামলীর খাবারের জন্য। আর যদি একটু বেশি টাকা দিত তাহলে শ্যামলীর জন্য একটি ভাল ঘর বানাতে পারতাম।

দুধ নিতে আসা নারায়ন দাস বলেন, শুনেছি এ বকনার দুধ খেলে অনেক রোগ ভাল হয়। তাই আসছি দুধ নিতে।

স্থানীয় মনিরুল বলেন, কয়েকদিন ধরে দেখছি অনেক লোক সকালে হাজির হয় দুধ নিতে। শুনেছি অনেক মানুষ এই দুধ খেয়ে ভাল হয়েছেন।

বাগেরহাট শহরের রওশনারা বেগম বলেন, কোমড়, ঘাড় ও পিঠে প্রচুর ব্যাথা ছিল। দুইদিন আগে দুধ নিয়ে খেয়ে একটু ভাল অনুভব করছি। তাই আবার আসছি।

মল্লিকেরবেড় এলাকার লিলি বেগম, আমি পিজিতে ডাক্তার দেখিয়েছিলাম ঢাকা পিজিতে। তারপরও সুস্থ্য হইনি। কিন্তু এই দুধ খাওয়ার পরে সুস্থ্য হয়ে গেছি।

বাগেরহাটের আলোকদিয়া গ্রামের জাকির হোসেনের ৯ বছরের মেয়ে রহিমা হাটতে পারত না। এই দুধ খেয়ে সে এখথন হাটতে পারে বলে জানালেন তার ফুফু। বাগেরহাট শহরের আনছার আলী সরদার, মহিউদ্দিন, নাছিমাসহ আরও কয়েকজন জানালেন দুধ খেয়ে উপকার পাওয়ার কথা।

বাশতলী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী বলেন, দুধ নিতে প্রতিদিন মহানন্দের বাড়িতে হাজার হাজার লোক আসে। শৃক্সখলা রক্ষার জন্য স্থানীয় লোকজন ও চকিদাররা সহযোগিতা করছে। প্রশাসন এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা এ বিষয়টি অবলোকন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার অনুরোধ জানান তিনি।

বাগেরহাট জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. লুৎফর রহমান বলেন, অনেক সময় হরমন জনিত সমস্যার কারণে বাচ্চা প্রসবের আগেই বকনার বানে দুধ আসতে পারে। এটা একটি সমস্যা। তবে এ দুধ খেলে কোন সমস্যা হবে না। গাভীর দুধের মত এই দুধও খাওয়া যায়। তবে কেউ যদি রোগমুক্তি বা বিশেষ কোন কারণে এই দুধ পান করে থাকেন তবে এটা তার একান্ত নিজস্ব বিশ্বাসের ব্যাপার। এখানে আমাদের কিছু বলার নেই।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।