খালেদা জিয়ার ‘মুক্তি’: কাদেরকে যে বার্তা দিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী
বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির ইস্যুটি গত দু’ তিন দিন ধরে বেশ আলোচিত হচ্ছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে হঠাৎ উত্তাপ ছড়াচ্ছে বিষয়টি। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে ভর্তি খালেদা জিয়াকে বিএনপির তিন সংসদ সদস্য দেখে আসার পর থেকে এই আলোচনা শুরু।
খালেদা জিয়াকে দেখে বেরিয়ে এসে বিএনপির সংসদ সদ্য ও দলের যুগ্ম মহাসচিব হারুন অর রশীদ বলেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি নিজের হাতটাও নাড়াতে পারেন না। দিন দিন তার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এমতাবস্থায় তার জামিন হলে তিনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যাবেন।
এর পরদিন বুধবার হারুন অর রশিদ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারকে নমনীয় হতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ওবায়দুল কাদেরকে অনুরোধ করেন। ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে বিএনপির অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন বলে তাকে আশ্বস্ত করেন। ওইদিনই রাতে ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতে বিষয়টি তুলে ধরেন।
বৈঠক সূত্র জানায়, এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অনমনীয় মনোভাব পোষণ করেন। ভারত সফরে যাওয়ার আগের দিন রাতে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে ওবায়দুল কাদেরকে স্পষ্ট বার্তা দিয়ে যান শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর অনমনীয় মনোভাব বুঝতে পেরে ওবায়দুল কাদের এ বিষয়ে আর কিছুই বলেননি।
বৈঠকের একটি অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, বিএনপি চেয়ারপারসন কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে ‘নো কম্প্রোমাইজ’ বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। এ নিয়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে বেশি কথাবার্তা না বলার নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোনো উল্টাপাল্টা কথাবার্তা বলবা না। তার (খালেদা জিয়া) বিষয়ে কোনো কম্প্রোমাইজ নয়।’
প্রধানমন্ত্রী সাফ জানিয়ে দেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে সরকারের শিথিলতা দেখানোর সুযোগ নেই। খালেদা জিয়া আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্ত হতে পারলে তাতে আপত্তি নেই।
প্রসঙ্গত, দুর্নীতির দুই মামলায় ১৭ বছর দণ্ড নিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে কারাগারে রয়েছেন। ৭৪ বছর বয়সী খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য গত ১ এপ্রিল থেকে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে ৬০৬ নম্বর কেবিনে।
বিএনপি নেতারা বলছেন খালেদা জিয়া ৩০ টিরও বেশি মামলার আসামি। দণ্ড পাওয়া দুটি মামলা ছাড়া সবকটি মামলায় তিনি জামিনে রয়েছেন। এ দুটি মামলায়ও তিনি জামিন পাওয়ার হকদার। সরকার এক্ষেত্রে বিচার বিভাগে হস্তক্ষেপ করে খালেদা জিয়াকে আটকে রেখেছে বলে অভিযোগ বিএনপি নেতাদের। রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছাড়া আর সরকারের নির্দেশনা ছাড়া খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন না-বিএনপি নেতারা এ বিষয়ে মোটামুটি একমত। এ কারণেই তারা রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসেবে দলের সংসদ সদস্যদের দিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে বৃহস্পতিবার সকালে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির এমপিদের অনুরোধের বিষয়টি আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলেছি। তিনি খালেদা জিয়ার জামিনে মুক্তির বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগে বুধবার ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘বেগম জিয়ার সঙ্গে আমাদের তো আমাদের কোনো শত্রুতা নেই, তিনি যদি জামিন পান, জামিন পেলে চিকিৎসকরা বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে রিপোর্ট দেন তখন দেখা যাবে।’
‘উনি যদি জামিন পান এবং চিকিৎসকরা যদি মনে করেন তার বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করা দরকার, সেটা তারা বলতে পারেন। সে ধরনের কোনো রিপোর্ট পেলে, চিকিৎসকদের পরামর্শ থাকলে জানাতে পারেন। আদালতে জামিন দেয়ার বিষয়ে সরকার বলতে পারে না। এটি আদালতের উপর ছেড়ে দিন’-যোগ করেন কাদের।
জামিনের বাইরে বিকল্প ব্যবস্থায় খালেদা জিয়ার বিদেশে যাওয়ার কোনো আলোচনা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এমপি হারুন শুধু জামিনের কথা বলেছেন, নেত্রীকে জানাতে বলেছেন। তিনি তো আন্তরিকভাবেই বলেছেন, বেগম জিয়ারও হয়তো ইচ্ছা থাকতে পারে। বেগম জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই আমার সঙ্গে আলোচনা করেছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ নিজেও এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানান কাদের।
এমতাবস্থায় খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে রাজনৈতিক সমঝোতা আর হচ্ছে না বলেই ধরে নিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। খালেদা জিয়ার মুক্তিও আটকে গেল। কারণ বিএনপি খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তির জন্য আবেদন করবে না। খালেদা জিয়াও এতে রাজি নন। তিনি দলের সংসদ সদস্যদের সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তি তার হক। প্যারেলে মুক্তির আবেদন করতে হবে কেন? বিএনপির মহাসচিবও বলেছেন, খালেদা জিয়া কারো অনুকম্পায় মুক্ত হবেন না।
সূত্র যুগান্তর