৭ মন্ত্রী, ২৩ এমপি জি কে শামীমের পার্টনার (!)

রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে টেন্ডারমাফিয়া জি কে শামীম অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য দিচ্ছেন। তার সেই তথ্যগুলো যাচাইবাছাইও করা হচ্ছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন এমন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, জি কে শামীম যে তথ্য দিচ্ছে তার সবই যে সত্য এমনটাও নয়। তবে কিছু কিছু সত্য তথ্য যে তিনি দিচ্ছেন তা যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমেই প্রমাণিত হচ্ছে। তার এই তথ্যের ভিত্তিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থারা পরবর্তী অ্যাকশনে যাবে।

গোয়েন্দা সংস্থার কাছে জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম বলেছেন যে, বর্তমান ও সাবেক ৭ মন্ত্রী এবং ২৩ এমপিকে তিনি নিয়মিত টাকা দিতেন। তারা ছিল শামীমের ‘বিজনেস পার্টনার’। বিভিন্ন টেন্ডারকাজের জন্য তারা সরকারের উচ্চমহলে তদবির করতেন এবং কাজ পাইয়ে দিতে সাহায্য করতেন। এর বিনিময়ে তারা মোটা অংকের কমিশনও পেতেন। জি কে শামীম জানিয়েছে, যখনই একটি টেন্ডার হতো বা একটি কাজের প্রক্রিয়া শুরু হতো তখন তিনি ঐ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব বা সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ করতেন। তাদের সঙ্গে বৈঠক করতেন, এই কাজটি পেলে কে কত ভাগ পাবে তা নির্ধারিত হতো। তারপর এই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় জি কে শামীম অংশগ্রহণ করতো।

গোয়েন্দা সংস্থার কাছে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম স্বীকার করেছেন যে, শুধুমাত্র গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ই নয়, অন্যান্য অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেও কাজ করেছেন জি কে শামীম। এ সমস্ত মন্ত্রণালয়ের কাজ করার জন্য মন্ত্রী এবং এমপিদের সহযোগিতা প্রয়োজন হতো। শামীম যে ৭ জন মন্ত্রীর নাম বলেছেন, তাদের মধ্যে ৩ জন বর্তমান মন্ত্রী। তারা মন্ত্রী হওয়ার আগে থেকে জি কে শামীমের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ছিল। বিভিন্ন সময়ে তারা জি কে শামীমের কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়েছেন। আর যে ২৩ জন এমপি, তারা গতবারেও এমপি ছিলেন, এবারেও এমপি আছেন। তাদের সঙ্গেও দীর্ঘদিন ধরে জি কে শামীমের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে বলে শামীম জানিয়েছে।

জি কে শামীম জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছে যে, অন্তত ৪০-৫০ কোটি টাকা তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে অনুদান দিতেন। এই অনুদানের টাকা কেবল আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরাই নন, বিএনপির প্রভাবশালী নেতারাও পেতেন। জি কে শামীমের একটি ডায়রিও গোয়েন্দা সংস্থা জব্দ করেছে। সেই ডায়রিতে কাকে কত টাকা মাসে দিতে হবে সেই হিসাবও রয়েছে। সেখানে আরও কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে। অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রীকেও নিয়মিত মাসোহারা দিতেন। মন্ত্রীদের জন্য একরকম রেট, সচিবদের জন্য একরকম রেট এবং এমপিদের জন্য আরেকরকম রেট নির্ধারিত ছিল। তবে জি কে শামীম সবচেয়ে বেশি টাকা দিতো টেন্ডারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী বা প্রকল্প কর্মকর্তাদের। এদের সঙ্গেই জি কে শামীমের দহরম মহরম অনেক বেশি ছিল।

শুধু দেশে নয়, বিদেশেও জি কে শামীম সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছেন। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া এবং ব্যাংককে জি কে শামীমের বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ রয়েছে। প্রভাবশালী রাজনৈতিকরা যখন সেসব দেশে যেতো, সেখানেও অনুদানের টাকা তাদের কাছে পৌঁছে যেত।

জিজ্ঞাসাবাদে শামীম আরও বলেছেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ব্যাংককে চিকিৎসার একটি বড় অংক জুগিয়েছিলেন তিনি। এর আগে জিজ্ঞাসাবাদে জি কে শামীম জানিয়েছিলেন যে, তারেক জিয়াকে মাসে মাসে তিনি ১ কোটি টাকা করে দিতেন। গোয়েন্দা সংস্থা এই বক্তব্য যাচাই করে বক্তব্যের সত্যতা পেয়েছে। শামীমকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে এমন একজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জি কে শামীম একটি বিস্তৃত নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কাজ করতো। কোনো টেন্ডারই যেন হাতছাড়া না হয়ে যায়, সেজন্য যা যা করা দরকার তার সবকিছুই শামীম করতো। এখন শামীম মুখ খুললেও যারা তাকে বিভিন্ন সময়ে সহযোগিতা করেছে, যারা বিভিন্ন সময়ে তার কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা নিয়েছে- তারা এখন জি কে শামীমের কথা অস্বীকার করছে। এমনকি তারা যে জি কে শামীমকে চেনে সেটাও স্বীকার করছে না। ফলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে অনেক ধীরেসুস্থে এগোতে হচ্ছে এবং তথ্যপ্রমাণ নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।

একজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কর্মকর্তা বলেছেন, যেসব ব্যক্তিদের নাম জি কে শামীমের কাছ থেকে পাওয়া যাচ্ছে তারা সবাই প্রভাবশালী। কাজেই যথাযথ তথ্যপ্রমাণ ছাড়া তাদের নাম প্রকাশ করা একটি বিপত্তির ব্যাপার। এজন্যই এ ব্যাপারটিতে ‘ধীরে চলো নীতিতে’ এবং তথ্যপ্রমাণ যোগাড়ের দিকেই বেশি মনোযোগ দিচ্ছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা।

সুত্র: বাংলা ইনসিডার।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।