আজ বিশ্ব হার্ট দিবস
বিশ্বে ৩১ ভাগ মৃত্যুর জন্য হৃদরোগ দায়ী
বিশ্বে প্রতিবছর ১৭ দশমিক ৫ মিলিয়ন বা পৌনে দুই কোটি মানুষের মৃত্যু হয় হৃদরোগে। ৩০ থেকে ৭০ বছর বয়সী প্রতি ১০ জনে একজন এ রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান। আতঙ্কের বিষয় হল- বিশ্বে ৩১ ভাগ মৃত্যুর জন্যই দায়ী হৃদরোগ। এছাড়া অল্প বয়সে মৃত্যুর ৮০ শতাংশ কারণও এ রোগ। এ তথ্য ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের।
এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব হার্ট দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘একটি আদর্শ প্রাঙ্গণ তৈরি করে হয়ে যান হার্ট হিরো’। এ প্রতিপাদ্যের অন্তর্নিহিত বিষয় হল- প্রত্যেক মানুষ যার যার স্থান থেকে হৃদরোগ থেকে মুক্ত থাকতে এবং হার্টকে সুস্থ রাখতে দায়িত্ব পালন করতে পারেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার লক্ষ্য- ২০২৫ সালের মধ্যে অসংক্রামক ব্যাধিজনিত মৃত্যুর হার হ্রাস করা এবং অল্প বয়সে হৃদরোগজনিত কারণে মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা।
বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ সম্পর্কে ব্যাপক জনসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য এ দিবসটি পালন করা হয়। ১৯৯৯ সালে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশন ও ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশন যৌথভাবে বিশ্ব হার্ট দিবস পালনে সম্মত হয়। দিবসটি সম্পর্কে সর্বপ্রথম ধারণা দেন ১৯৯৭-৯৯ সেশনে ওয়ার্ল্ড হার্ট ফেডারেশনের সভাপতির দায়িত্বে থাকা অ্যান্থনি বেইস ডি লুনা। প্রথম হার্ট দিবস পালন করা হয় ২০০০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর। ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রতিবছর সেপ্টেম্বরের শেষ রোববারটি বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা হতো। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সাল থেকে ২৯ সেপ্টেম্বর দিনটিকে বিশ্ব হার্ট দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হৃদপিণ্ড হচ্ছে মানুষের শরীরের একমাত্র অঙ্গ, যেটা আমাদেরকে সত্যিকার অর্থে বাঁচিয়ে রাখে। কেননা মানুষের মস্তিষ্কের মৃত্যু হলেও আমরা তাকে জীবিত বলতে পারি যতক্ষণ পর্যন্ত হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা সচল থাকবে। হৃদরোগের প্রাথমিক লক্ষণ হল এনজাইনা, শ্বাসকষ্ট হওয়া, অনিয়ন্ত্রিত হৃদস্পন্দন হওয়া ইত্যাদি। এনজাইনা হচ্ছে রোগীর সাধারণত বুকে ব্যথা, বুকে চাপ অনুভব করা, বুক ভার ভার হওয়া, দম বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হওয়া ইত্যাদি। কারও করোনারি আর্টারি বা হার্টের রক্তনালির ৭০ শতাংশ ব্লক হয়ে গেলে তখনই এনজাইনা হয়ে থাকে। কখনও কখনও এনজাইনা থেকে হার্ট অ্যাটাক হয়।
আবার করোনারি ধমনি যখন ১০০ শতাংশ ব্লক হয়, তখনই হার্ট অ্যাটাক হয়। অনিয়মিত হৃদস্পন্দনের ফলেও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। হার্ট অ্যাটাক একটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা, যেখানে জীবন ও মৃত্যু খুব কাছাকাছি চলে আসে। এটি সাধারণত বয়স্কদের রোগ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে, ৬০ থেকে ৭০ বছর বয়সী মানুষের এটি বেশি হয়ে থাকে। আমাদের দেশে ৫০ থেকে ৬০ বছর বয়সীরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ অঞ্চলে দুর্বল হার্ট বা কার্ডিওমায়োপ্যাথি একটি পরিচিত হৃদরোগ, যেখানে হার্টের কার্যক্ষমতা কমে যায়। বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ বাংলাদেশের আরেকটি বড় সমস্যা। সাধারণত ছোটবেলায় বাতজ্বর থেকে পরবর্তী সময়ে বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ হয়ে থাকে। বাতজ্বরজনিত রোগে সাধারণত হার্টের ভাল্ব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর মধ্যে কিছু রোগ চিকিৎসার মাধ্যমে ভালো করা সম্ভব। আর কিছু রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। যদি সময়মতো চিকিৎসা করা না হয়, তাহলে পরবর্তী সময়ে শৈল চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে হতে পারে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিওলজির সহযোগী অধ্যাপক ডা. মহসীন আহমেদ সেহেল যুগান্তরকে বলেন, ৮০-৯০ দশকে আমদের দেশে মানুষের মৃত্যুর প্রধান কারণ ছিল সংক্রামক রোগ। তবে ২০০০ সালের পর থেকে হৃদরোগের মতো অসংক্রামক রোগ ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে।
তিনি বলেন, হৃদরোগের ঝুঁকি এড়াতে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। যেমন- স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। শিশুদের জাঙ্ক ফুড খাওয়ানো থেকে বিরত থাকতে হবে। এছাড়া কায়িক পরিশ্রম করা, হাঁটাহাঁটি করা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানো, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ধূমপান না করা ও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।