সর্বশেষঃ

আজ জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন

আজ ২৮ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিন। তিনি বর্তমানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করলেও আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দেশে এবং দেশের বাইরে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে তার জন্মদিন পালনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার ৭৩তম জন্মদিনে দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদ পত্রিকার পক্ষ থেকে তার প্রতি রইলো আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।

শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছার বড় সন্তান এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদে দোয়া মাহফিল করা হয়েছে। এতে প্রধানমন্ত্রীর সুস্বাস্থ্য কামনা এবং বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের নিহত সদস্যদের জন্য দোয়া করা হয়। আজ শনিবার এ উপলক্ষে সারা দেশে প্রতিটি ইউনিটকে ৭৩টি গাছ রোপণের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ।

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের কারিগর এই নেত্রী ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব গ্রহণের পর জীবনবাজি রেখে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে দলকে সুসংগঠিত করেন। তিনি ১৯৯৬ সালে প্রথমবার, ২০০৮ সালে দ্বিতীয়, ২০১৪ সালে তৃতীয় এবং ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে জয়লাভ করে দলকে দেশের ক্ষমতার আসনে আসীন করেছেন। তার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে।

বর্তমানে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া বঙ্গবন্ধু পরিবারের কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের নির্মম বুলেটে নিহত হন। শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খ্যাত।

তিনি ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।

শেখ হাসিনা ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬-দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।

১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার আগে ছোট বোন শেখ রেহানাসহ শেখ হাসিনা ইউরোপ যান। সেখানে অবস্থানকালে তিনি সপরিবারে বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার খবর পান। তাৎক্ষণিকভাবে দেশে ফেরার কোনো পরিবেশ না থাকায় তিনি ইউরোপ ছেড়ে স্বামী-সন্তানসহ ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন।

১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে তাকে দলের সভানেত্রী করা হয়। আর ওই বছরেরই ১৭ মে দীর্ঘ ছয় বছর প্রবাস জীবনের অবসান ঘটিয়ে দেশে ফেরেন তিনি।

১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে তিনি তিনটি আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরে তিনি পঞ্চম জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সরকার গঠন করে এবং সেই বছরের ২৩ জুন প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের জনসভায় গ্রেনেড নিক্ষেপ করে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশের বেশি আসন নিয়ে বিশাল বিজয় অর্জন করে। এই বিজয়ের মধ্যদিয়ে শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি তৃতীয়বার এবং ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে চতুর্থবারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন।

রাজনীতি বিশ্লেষক ও সিনিয়র সাংবাদিক-লেখক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্ব সম্পর্কে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জেমস ম্যাকগ্রেগর বার্নস ‘নেতৃত্ব’ সম্পর্কে তার ‘লিডারশিপ’ বইয়ে দুই ধরনের নেতৃত্বের কথা বলেছেন। তার বয়ান মোতাবেক, স্থানীয় বা জাতীয় রাজনীতিতে একদল নেতা আছেন, যারা আদান-প্রদাননির্ভর। তারা নিজের সুযোগ-সুবিধা, ক্ষমতা এবং নিজের স্বার্থবলয়ের বাইরে কিছু ভাবতে পারেন না। তারা গদিতে বসেন, গদি হারান; কিন্তু সমাজ ও মানুষের মনে চিরস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারেন না। মানুষ তাদের একটা সময়ের পর আর মনে রাখে না। এ ধরনের নেতাদের তিনি ট্রানজেকশনাল লিডার বলেছেন। আরেক দল নেতা আছেন, তারা বিরল ধরনের। তারা সমাজকে আলোর পথ দেখান। মানুষের পুরোনো জীবনদৃষ্টি বদলে দেন। ঘরে ঘরে করেন উন্নয়ন ও জ্বালেন জীবনমুখী শিক্ষার প্রদীপ। জেমস বার্ন এ ধরনের নেতাদের বলেছেন ট্রান্সফরমিং লিডার।

মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ আরো বলেন, জেমস বার্নের লিডারশিপ তত্ত্ব অনুযায়ী, আমাদের দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন সেই বিরল প্রকৃতির নেতা। এখন তার মেয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই ধরনের নেতা। তার নেতৃত্বের গুণ ও মান এখন বিশ্বকে নাড়া দিচ্ছে। তিনি এখন বিশ্ব পরিসরে রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে সুপরিচিত।

তিনি এমন এক পরিবর্তনকামী নেতা— যিনি কিনা সুজলা-সুফলা বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন জঙ্গি ও মৌলবাদীদের হাত থেকে। ‘আমরা সবাই তালেবান/বাঙলা হবে আফগান’ এই সর্বনাশা স্লোগানধারী নালায়েক ও নচ্ছারদের রুখে দিয়েছেন তিনি। দেশে ঘটিয়েছেন নারী জাগরণ, উন্নয়ন আর ভাগ্য বদলের সুযোগ পৌঁছে দিয়েছেন দেশের ঘরে ঘরে। এখন আমাদের দেশে চলছে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অগ্রগতির যুগসন্ধিক্ষণ। এই উৎক্রমণকালের কান্ডারি তিনি ছাড়া আর কী কেউ হতে পারেন? নাকি হওয়া উচিত। সহজ কথায় শেখ হাসিনা এখন ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানো নেতা।

শেখ হাসিনা বর্তমানে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। এর আগে বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন সম্মানসূচক ডিগ্রি, পদক ও স্বীকৃতি দিয়ে শেখ হাসিনার অসামান্য অবদানকে সম্মানিত করা হয়েছে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অসামান্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মর্যদাপূর্ণ ‘ভ্যাকসিন হিরো’ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে। এর আগেও তিনি দেশ-বিদেশে অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেছেন।

ফেসবুকে লাইক দিন

আমাদের সাইটের কোন বিষয়বস্তু অনুমতি ছাড়া কপি করা দণ্ডনীয় অপরাধ।