ক্যাসিনোর আয়ের ভাগ সাঈদকে দিতেন মোহামেডানের লোকমান
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের ডিরেক্টর ইনচার্জ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ক্যাসিনো থেকে কোটি কোটি টাকা উপার্জন করেছেন।
সেই টাকা আছে অস্ট্রেলিয়ার দুই ব্যাংকে। ক্যাসিনো চালানোর জন্য তিনি যুবলীগ নেতা মমিনুল হক সাঈদকে টাকা দিতেন। সাঈদ আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি। আটকের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাবের কাছে এ কথা জানান লোকমান।
বুধবার দিবাগত রাতে লোকমানকে তাঁর মণিপুরী পাড়ার বাসা থেকে আটক করে র্যাব-২। আটকের পর তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাব-২-এর কার্যালয়ে নেয়া হয়। বৃহস্পতিবার সকালে র্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ এই তথ্য জানান।
লোকমান হোসেন ভূঁইয়া বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালকও। অন্যদিকে, সাঈদ বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক। তিনি যুবলীগ নেতা। আবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাউন্সিলর। তিনিও ক্যাসিনো-বাণিজ্যে জড়িত। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগ আছে।
র্যাব-২-এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে লোকমান জানান, ক্লাবের ক্যাসিনোর টাকা তিনি আরামবাগ ক্রীড়া সংঘের সভাপতি ও বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এ কে এম মমিনুল হক ওরফে সাঈদের কাছে পাঠাতেন। সাঈদের মাধ্যমে টাকা কোথায় রাখতেন, দেশে নাকি বিদেশে পাঠাতেন, সে বিষয়ে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তার বিরুদ্ধে তেজগাঁও থানায় মামলা হয়েছে। বুধবার রাতে তাকে রাজধানীর তেজগাঁও মনিপুরী পাড়ার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব অধিনায়ক বলেন, প্রথামিক জিজ্ঞাসাবাদে লোকমান র্যাবকে তার ৪১-৪২ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিবরণ দিয়েছেন।
অস্ট্রেলিয়ার ব্যাংকে তিনি গত মাসে ২৬ হাজার ডলার পাঠিয়েছেন। প্রতি ৪ মাস পরপর তিনি সেখানে ১২ হাজার ডলার করে পাঠান।
অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, প্রকৃত সম্পদের চেয়ে তিনি র্যাবের কাছে সম্পদের হিসাব কম দেখিয়েছেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়াতে তার ছেলে পড়ালেখা করে। সেখানে তার নামেও ব্যাংক হিসাব আছে। সেখানেও লোকমানের মোটা অঙ্কের অর্থ থাকতে পারে। অবৈধ আয়ের মোটা অঙ্কের টাকা অস্ট্রেলিয়ার কমনওয়েলথ ও এএনজেড ব্যাংকে রাখা আছে।
লোকমান হোসেন ভূঁইয়া ২৬ বছর ধরে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছিলেন। দুটি পদের অপব্যবহার করেই তিনি ক্লাবটি ক্যাসিনো চালানোর জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। প্রায় ২ বছর আগে ওই ক্লাবে ক্যাসিনো ব্যবসা শুরু হয়।
র্যাব-২-এর কমান্ডিং লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে লোকমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আমাদের কাছে তথ্য ছিল তার বাসায় ক্যাসিনোর মোটা অংকের টাকা আছে।
অবৈধভাবে টাকা উপার্জনের জন্যই তিনি মোহামেডান ক্লাবের কয়েকটি রুম ক্যাসিনোর জন্য ভাড়া দিয়েছিলেন। বুধবার সন্ধ্যা থেকেই তার বাড়িটি নজরদারিতে রাখা হয়।
অভিযান শুরু করতে একটু দেরি হয়ে যায়। তার বাড়িতে প্রবেশ করা হয় রাত ১০টার দিকে। তাছাড়া গত কয়েক দিনের ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের কারণে তিনি অনেকটা সতর্ক হয়ে গিয়েছিলেন।
ক্লাবে ক্যাসিনো চালানোর বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে প্রথমে জানান, রাজনৈতিক চাপের কারণে তিনি ক্লাব ভাড়া দিতে বাধ্য হয়েছেন। পরে জানান, মূলত অবৈধ অর্থ উপার্জনের জন্যই তিনি ক্যাসিনো বাণিজ্যে যুক্ত হন।
১৮ সেপ্টেম্বর থেকে অবৈধ জুয়া-ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করে র্যাব। র্যাবের হাতে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন ২১৬ জন।
এদের মধ্যে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়া হয়েছে ২০১ জনকে। যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জি কে শামীম এবং কৃষক লীগ নেতা শফিকুল আলম ফিরোজসহ ১৩ জন রিমান্ডে আছেন।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাদের আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করছিল। রিমান্ডে তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে আসে অনেক রাঘববোয়ালের নাম। বেরিয়ে আসে অনেক পুলিশ কর্মকর্তার নাম।
এ কারণে বিষয়টির তদন্ত করতে বিব্রত বোধ করে ডিবি। তাই এ সংক্রান্ত মামলাগুলো র্যাবের মাধ্যমে তদন্ত করার সিদ্ধান্ত হয়। এরই মধ্যে খালেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ২ মামলা র্যাবের হাতে ন্যস্ত হয়েছে।